শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গগুলো কেবল গলবিলের দিকে খোলা, অন্য সবদিকে বন্ধ। ফলে নাসাপথের ভিতর দিয়ে ফুসফুসের বায়ুথলি পর্যন্ত বাতাস নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। স্নায়বিক উত্তেজনা দিয়ে শ্বাসকার্য পরিচালিত হয়। স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে পিঞ্জরাস্থির মাংসপেশি ও মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হয়। ফলে মধ্যচ্ছদা নিচের দিকে নেমে যায় এবং বক্ষগহ্বর প্রসারিত হয়। বক্ষগহ্বরের আয়তন বেড়ে গেলে বায়ুর চাপ কমে যায়, ফলে ফুসফুসের ভিতরের বায়ুর চাপ বাইরের বায়ুর চাপের চেয়ে কমে যায়। বক্ষপহ্বরের ভিতর এবং বাইরের চাপের সমতা রক্ষার জন্য প্রশ্বাস বায়ু ফুসফুসের ভিতর সহজে প্রবেশ করতে পারে। এই পেশি সংকোচনের পরপরই পুনরায় প্রসারিত হয়। তাই মধ্যচ্ছদা পুনরায় প্রসারিত হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় এবং বক্ষগহ্বরের আয়তন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এতে ফুসফুসের ভিতরের বায়ুর চাপ বেড়ে যায়, ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বায়ুসমৃদ্ধ বাতাস নিঃশ্বাসরূপে বাইরে বের হয়ে যায়। এভাবে মানবদেহে প্রতিনিয়ত শ্বাসকার্য চলতে থাকে। মূলত এটা বহিঃশ্বসন।
গ্যাসীয় বিনিময়
গ্যাসীয় বিনিময় বলতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বিনিময়কে বুঝায়। এটি মূলত বায়ু ও ফুসফুসের রক্তনালির ভিতরে ঘটে। সব ধরনের গ্যাসীয় বিনিময়ের মূলে রয়েছে ব্যাপন প্রক্রিয়া। গ্যাসীয় বিনিময়কে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়, অক্সিজেন শোষণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ।
অক্সিজেন শোষণ
ফুসফুসের বায়ুখলি বা অ্যালভিওলি ও রক্তের চাপের পার্থক্যের জন্য অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তে প্রবেশ করে। ফুসফুস থেকে ধমনির রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করার পর রস্তে অক্সিজেন দুভাবে পরিবাহিত হয়। সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে পরিবাহিত হয়। বেশির ভাগ অক্সিজেনই হিমোগ্লোবিনের লৌহ অংশের সাথে হালকা বন্ধনের মাধ্যমে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে একটি অস্থায়ী যৌগ গঠন করে। অক্সিহিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন সহজে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন → অক্সিহিমোগ্লোবিন (অস্থায়ী যৌগ)
অক্সিহিমোগ্লোবিন → মুক্ত অক্সিজেন + হিমোগ্লোবিন
রন্ত কৈশিকনালিতে পৌঁছার পর অক্সিজেন পৃথক হয়ে প্রথমে লোহিত রক্তকণিকার আবরণ ও পরে কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদ করে লসিকাতে প্রবেশ করে। অবশেষে লসিকা থেকে কোষ আবরণ ভেদ করে কোষে পৌঁছে।
কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন
খাদ্য জারণ প্রক্রিয়ায় কোষে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রথমে কোষ আবরণ ভেদ করে আন্তঃকোষীয় তরল ও লসিকাতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদ করে রক্তরসে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রধানত সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (NaHCO3) রূপে রক্তরসের মাধ্যমে এবং পটাশিয়াম বাই কার্বোনেট KHCO3 রূপে লোহিত রক্তকণিকা দিয়ে পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে আসে, সেখানে কৈশিকনালি ও বায়ুথলি ভেদ করে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
একক কাজ
কাজ: নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত গ্যাসের প্রকৃতি নির্ণয়।
উপকরণ: দুটি টেস্টটিউব, একটি 10 ml. ইনজেকশন সিরিজ (সুচ বাদে), দুটি প্লাস্টিকের নল (যার অন্তত একটি নল সিরিজের মুখে বায়ুরোধী করে আটকালো যায়) এবং চুনের পানি।
পদ্ধতি: টেস্টটিউব দুটিতে সমপরিমাণ চুনের পানি নিতে হবে। তারপর দুটি টেস্টটিউবের প্রতিটির মধ্যে একটি করে নল এমনভাবে প্রবেশ করাতে হবে যাতে দুটি নলেরই এক প্রান্ত চুনের পানিতে ডুবে থাকে। এবার একটি নলের এক প্রান্ত সিরিঞ্জের মুখে বায়ুরোধী করে আটকাতে হবে। তবে আটকানোর আগে সিরিঞ্জের পিস্টন প্রায় পুরোটা টেনে 10 mL. দাগ পর্যন্ত নিতে হবে। নলের সাথে সিরিঞ্জ আটকানোর পর পিস্টন পুরোটা চেপে দিতে হবে। এর ফলে টেস্টটিউবের চুনের পানির মধ্যে বুদ্বুদ সৃষ্টি হবে। একইভাবে আরও কয়েকবার বায়ু চালনা কর। অপর টেস্টটিউবে চুনের পানিতে ডোবানো নলের উপরের প্রান্তে মুখ লাগিয়ে শ্বাস ছাড়তে থাক, শ্বাস ছাড়ার সময় নাক চেপে ধরলে ভালো হয়। তবে শ্বাস নেওয়ার সময় নল থেকে প্রতিবার মুখ সরিয়ে নাও। উভয় টেস্টটিউবের চুনের পানি প্রায় 15 সেকেন্ড ধরে পর্যবেক্ষণ কর। টেস্টটিউব দুটির কোনোটিতেই পরিবর্তন না ঘটলে আরও 15 সেকেন্ড ধরে পরীক্ষা চালাতে থাক।
পর্যবেক্ষণ: একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবে যে টেস্টটিউবের চুনের পানিতে সিরিঞ্জের মাধ্যমে সাধারণ বাতাস চালনা করা হয়েছে সেটিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর যেটিতে নিঃশ্বাস বায়ু চালনা করা হয়েছে, সেটি ঘোলা হয়ে দুধের মতো রং ধারণ করেছে।
সিদ্ধান্ত: নিঃশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির ফলে চুনের পানি ঘোলা হয়ে গেছে। কারণ নিঃশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সাধারণ বাতাসের (বা আমরা প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি) তুলনায় বেশি থাকে। এজন্য সাধারণ বায়ু চালনা করায় চুনের পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
Read more